শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করছেন ! জেনে নিন ক্ষতি কতটা ! সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ঘোষণা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, জরুরি বিভাগসহ সব সেবা বন্ধ ঢামেকে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ স্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স ভাইরাস, বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ডব্লিওএইচওর ঢাকা মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ! পঞ্চগড়ে আন্তর্জাতিক মানের সুপার-স্পেশালিটি হেলথ-কেয়ার “নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল-এনপিএমসিএইচ” বাজারে ৬৫ হাজার টাকার ‘ভুয়া’ ক্যান্সার ইনজেকশন দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে

কিডনি কেনাবেচা সহজে !

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচা চক্রের হোতা মো. শহিদুল ইসলাম মিঠুসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর  উত্তরা র‍্যাব-১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কর্মকর্তারা।

র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে বুধবার (২০ জুলাই) ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব ।

তিনি বলেন, এ সময় কিডনি কেনাবেচা সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মো. শহিদুল ইসলাম মিঠু, মো. মিজানুর রহমান, মো. আল মামুন ওরফে মেহেদী, মো. সাইমন, মো. রাসেল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে কিডনি কেনাবেচার চুক্তির এফিডেভিট কপি, ভুক্তভোগীদের পাসপোর্টসহ মোট ১৪টি পাসপোর্ট, কিডনি ক্রসম্যাচিং এর বিভিন্ন দলিল, দেশি-বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি, ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের জাল সিলমোহর, খালি স্ট্যাম্প, সিপিইউ, মোবাইল ও সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনাবেচা চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা মূলত ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি কেনাবেচার এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। 

র‍্যাব জানায়, চক্রের সদস্যরা কিডনি কেনাবেচা সদস্যদের চক্রের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে পাচার করেছে।  চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তৃতীয় অন্য একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। 

আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপাচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়। গ্রেপ্তারকৃতরা চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র ৪ থেকে ৪.৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে এবং অগ্রিম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।  চক্রের হোতা  মিঠু  ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে যায়। সেখানে অবস্থানকালীন সে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পায় এবং সে নিজেই কিডনি প্রতিস্থাপনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে সে এখানে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে। অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন।

উল্লেখ্য, যেসব ব্যক্তিদের কাগজপত্র সঠিক থাকে না কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে, তাদের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে।  সে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করে আসছে। আর সাইমন ১ বছর আগে এবং মেহেদী ৬ মাস আগে চক্রটির মাধ্যমে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করে। পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে অধিক টাকা উপার্জনের লোভে তারা এ চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।  কিডনি ডোনার ও ক্রেতা সংগ্রহে লিপ্ত হয়। তারা নিজেদের সুস্থতার প্রমাণ দেখিয়ে অন্যান্য ডোনারদের কিডনি বিক্রয়ে আগ্রহী করত। তারা অদ্যবধি ১০ জনের কিডনি ক্রয় বিক্রয় করেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত মো. রাসেল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য ডোনারদের সংগ্রহ করতো। চক্রটি কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের পার্শ্ববর্তী দেশে কিডনি চিকিৎসায় সহায়তার নাম করে, অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে, কিডনি প্রতিস্থাপনে উৎসাহিত করতো। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের আড়ালে তারা এ ভয়ঙ্কর কিডনি কেনা বেচার সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিল।

র‍্যাব জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এসব কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে। ইতোপূর্বে র‍্যাববের অভিযানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচা চক্রে অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনসহ চক্রের ৫ সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। একই সাথে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক কিডনি কেনা বেচার অন্যান্য চক্রগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সাইবার মনিটরিং ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে র‍্যাব । 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ ফলো করুন

Categories